নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কায়েমপুর এলাকার ফকির নীটওয়্যার শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা, শোকজ প্রত্যাহার ও পুলিশী হয়রানি বন্ধ করাসহ টাইম সোয়েটার লিমিটেড এর নীটিং শাখা লে-অফের ঘোষণা, হামিদ সোয়েটারে চাকুরিচ্যুতি বাতিল করা এবং প্যারাডাইজ কেবল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
সোমবার (১ জুন) সকাল ১১টায় সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এম এ শাহীন। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা দুলাল সাহা, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, প্যারাডাইজ কেবল শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ হোসেন, কাঠেরপুল অঞ্চলের নেতা মোস্তাকিম প্রমূখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন- শিল্প কারখানার মালিকরা করোনা দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে কারখানা লে-অফ, ছাঁটাই-বরখাস্ত করে শ্রমিকদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ফকির নীটওয়্যারের মালিক গত মার্চ মাসে পাঁচ শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করে এতে ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের আন্দোলনের চাপে কর্তৃপক্ষ ছাঁটাই প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নীল নকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঈদ মূহুর্তে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে তালবাহানা করে তাদেরকে ক্ষেপিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
এই সুযোগ নিয়ে শতশত শ্রমিককে শো সুকজ ও অজ্ঞাত নামা দুই শতাধিক শ্রমিকের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশী হয়রানি চালিয়েছে। এতে শ্রমিকরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিশেহারা। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পাঁয়তারা ও পুলিশ দিয়ে শ্রমিক হয়রানি এসব বন্ধ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন- সিদ্ধিরগঞ্জের ওমরপুর এলাকার ওল্ড টাউন ফ্যাশনে চার মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস না দিয়ে ৩০ জন শ্রমিক কে ছাঁটাই করা হয়েছে। বরফকল এলাকার প্রাইম গার্মেন্টসে শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। কাঠেরপুলের টাইম সোয়েটারে নীটিং শাখা লে-অফ করে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত করেছে। দাপা ইদ্রাকপুরে হামিদ সোয়েটারে ২৯ জন শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। প্যারাডাইজ কেবল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দেয়া হচ্ছে না।
এসব ঘটনায় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন শ্রমিকদের সংকট সমাধানের দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশী বাধা দেয়া হয়েছে।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র জেলার সভাপতি এম এ শাহীনের সাথে পুলিশ অশুভন আচরণ করে এমন কি তার গায়ে হাত দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের এই আচরণে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পতিত হয়েছে। এক দিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অন্যদিকে চাকুরি হারানোর শঙ্কা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দিনেদিনে শ্রমিকরা যেভাবে করোনা আক্রান্ত হচ্ছে এতে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। করোনা মহামারি ঠেকাতে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এবং সরকারের উদ্যোগে এখনি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে হবে।
তারা আরো বলেন, শ্রমিকদের জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া, চাকুরী ও কর্মের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই দুঃসময়ে কোন শ্রমিক ছাঁটাই ও গ্রেপ্তার হলে পরিণতি ভালো হবে না। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে সকল অন্যায়-অত্যাচার ও শ্রমিক হয়রানির দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ফকির নীটে শ্রমিক হয়রানির মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সকল কারখানায় ছাঁটাই-বরখাস্ত লে-অফ বাতিল করে শ্রমিকদের কাজে পূর্ণবহাল করা এবং ঈদ-উল ফিতরের ঈদ বোনাসসহ বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানান।